
রাগ, অভিমান ও ক্ষোভ ব্রেনের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এবং নতুন কিছু শেখা বা গ্রহণ করার সক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। এটি মূলত নিউরোসায়েন্স এবং সাইকোলজির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
রাগ, অভিমান ও ক্ষোভ কীভাবে ব্রেনের কার্যকারিতা ব্লক করে?
আমাদের ব্রেনের মধ্যে আবেগ এবং যুক্তির নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল কাজ করে, বিশেষ করে অ্যামিগডালা (Amygdala), প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (Prefrontal Cortex), এবং হিপোক্যাম্পাস (Hippocampus)। যখন আমরা অতিরিক্ত রাগ বা অভিমানের মধ্যে থাকি, তখন এই অঞ্চলগুলোতে একধরনের নিউরোকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়া ঘটে যা আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে।
A. আবেগের বিস্ফোরণ ও ব্রেন ব্লক করা
-কী হয়?
অ্যামিগডালা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা রাগ, হতাশা বা অভিমানের মধ্যে থাকি, তখন এটি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, যার ফলে আমাদের “Fight or Flight” রেসপন্স (লড়াই করো বা পালিয়ে যাও) ট্রিগার হয়।
এই অবস্থায় প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (যা যুক্তিবোধ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে) কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে আমরা নতুন কিছু শেখার বা ভাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি।
– ফলাফল:
অতিরিক্ত রাগ বা অভিমান আমাদের সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে বাধা দেয়।
চিন্তাশক্তি সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং আমরা সহজেই নতুন তথ্য গ্রহণ করতে পারি না।
যখন রাগ বা অভিমান ব্রেনের যুক্তিবোধকে অক্ষম করে ফেলে।
B. দিন দিন স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়
– কী হয়?
হিপোক্যাম্পাস আমাদের শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাগ বা দীর্ঘমেয়াদি অভিমান থাকলে কর্টিসল (Cortisol) নামক স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকে, যা হিপোক্যাম্পাসের কার্যকারিতা হ্রাস করে। নতুন তথ্য গ্রহণ বা স্মৃতি তৈরি করা কঠিন হয়ে যায়।
– ফলাফল:
নতুন কোনো বিষয় শিখতে গেলে মস্তিষ্ক সহজে গ্রহণ করতে পারে না।
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষোভ থাকলে এটি ক্রমশ আমাদের স্মৃতিশক্তির ওপরও নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
-নিউরোসায়েন্স টার্ম: স্ট্রেস হরমোনের কারণে মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়।
C. ব্রেনের নতুন কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা দিন দিন কমে যাওয়া:
– কী হয়?
ব্রেনের নিউরোনগুলো নতুন সংযোগ তৈরি করে, যা আমাদের শেখার ক্ষমতাকে বাড়ায় (এটি নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামে পরিচিত)। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি রাগ ও অভিমান থাকলে, কর্টিসল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি হ্রাস পায়।
যার ফলে ব্রেন নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারে না, আর ব্যক্তি আগের ক্ষোভ বা কষ্টের মধ্যেই আটকে থাকে।
ফলাফল:
নতুন দক্ষতা শেখার ইচ্ছা কমে যায়।
একই নেতিবাচক চিন্তায় আটকে থাকার প্রবণতা বাড়ে।
- নিউরোসায়েন্স টার্ম: নিউরোপ্লাস্টিসিটি রিডাকশন —ব্রেনের শেখার ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
সমাধান:
রাগ ও অভিমান মুক্ত থাকুন, ব্রেনকে উন্মুক্ত করুন!
১. মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশন:
প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের মেডিটেশন করতে পারেন, যা রাগের প্রভাব কমিয়ে ব্রেনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
২. ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলা: ক্ষমা করলে কর্টিসল কমে যায় এবং ব্রেনের নিউরোপ্লাস্টিসিটি বৃদ্ধি পায়, ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে।
৩. নতুন কিছু শেখার চর্চা করা: যত বেশি নতুন কিছু শেখা হয়, তত বেশি ব্রেন নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরি করে, যা অভিমান বা নেতিবাচক আবেগ কমাতে সাহায্য করে।
৪. ফিজিক্যাল এক্সাসারসাইজ (ব্যায়াম): নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডোপামিন ও সেরোটোনিন বৃদ্ধি পায়, যা ব্রেনকে সৃজনশীল ও ইতিবাচক রাখে।
রাগ, ক্ষোভ, এবং অভিমান শুধু মানসিক শান্তিই নষ্ট করে না, এটি সরাসরি ব্রেনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে নতুন কিছু শেখার বা গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। যদি আপনি সত্যিই সাকসেস এর দিকে এগিয়ে যেতে চান, তাহলে রাগ, অভিমান ও ক্ষোভকে দূরে সরিয়ে দিন এবং আপনার ব্রেনকে মুক্ত করা দরকার। ক্ষমা করা শুধু আত্মার প্রশান্তির জন্য নয়, বরং এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও আপনার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট !
এই বিষয়ে আরও পড়তে পারেন:
-Daniel Goleman – Emotional Intelligence
-Dr. Joe Dispenza – Breaking the Habit of Being Yourself
-Neuroscience Research on Amygdala & Prefrontal Cortex (Harvard Medical Journal, 2023)
ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য নিজেকে বা নিজের মন কে উন্মুক্ত করা উচিৎ, যা আপনার ব্রেনকে নতুন ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হেল্প করে!
—–
জীবন অনেক ছোট, আর রাগ-ক্ষোভ ধরে রাখার বোঝা হৃদয়কে কেবলই ভারী করে তোলে। পবিত্র রমজান মাসের অফুরন্ত রহমতে আমি আমার সকল অভিমান, কষ্ট ও রাগ মুছে ফেললাম। কথায় কিংবা কাজে বিগত দিনে যারা আমাকে আঘাত দিয়েছেন বা দিতে চেয়েছেন, আজ থেকে তাদের প্রতি আমার আর কোনো অভিযোগ নেই—আমি তাদের ক্ষমা করলাম।
ক্ষমা শুধু অন্যকে মুক্তি দেয় না, বরং নিজেকেও প্রশান্তি এনে দেয়। আত্মার শান্তির জন্য ক্ষমাই সর্বোত্তম পথ। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন, কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন, আর আমাদের হৃদয়কে শান্তিতে ভরে তুলুন। আমিন।
সাব্বীর আহম্মেদ
ব্র্যান্ড ডিজাইনার এবং ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্ট
ফাউন্ডার, ইন্টার্ন একাডেমী